ইন্টারনেট এর জনক কে | ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কত সালে

ইন্টারনেট এর জনক কে | ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কত সালেইন্টারনেট, যাকে আজকের বিশ্বে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়, তার আবিষ্কার এবং বিকাশ এক দীর্ঘ যাত্রার ফল। 

এটি শুধুমাত্র আধুনিক প্রযুক্তির অংশ নয় বরং বিজ্ঞান, গণিত, এবং প্রকৌশলের এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। যারা ইন্টারনেটের আবিষ্কার এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ভিন্টন সার্ফ এবং বব কান। 

অনেকেই তাঁদের ইন্টারনেটের জনক হিসেবে গণ্য করেন। চলুন এই আবিষ্কারের ইতিহাস এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

ইন্টারনেট এর জনক কে | ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কত সালে

ইন্টারনেটের ধারণার শুরু এবং প্রাথমিক উন্নয়ন

১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (DARPA) প্রথমবারের মতো একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল, যেটি ছিল মূলত সামরিক ব্যবহারের জন্য। এই প্রকল্পের নাম ছিল ARPANET। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করা এবং বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রের কম্পিউটারগুলিকে একত্রে সংযোগ স্থাপন করা।

১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো ARPANET সফলভাবে চারটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। এই চারটি নোড বা সংযোগস্থল ছিল স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (UCLA), ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা (UCSB), এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ। এটি ছিল ইন্টারনেটের বিকাশের এক প্রাথমিক রূপ, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত এবং উন্নত হয়েছে।

ইন্টারনেট প্রোটোকল (TCP/IP) এবং ভিন্টন সার্ফ ও বব কানের ভূমিকা

১৯৭০-এর দশকে ইন্টারনেট প্রযুক্তির আরও উন্নতি সাধিত হয়। মূলত এই সময়ে একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী প্রোটোকল তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এই প্রোটোকলটি আবিষ্কারের জন্য অনেক বিজ্ঞানী কাজ শুরু করেন, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম হল ভিন্টন সার্ফ এবং বব কান। তাঁরা যৌথভাবে ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল এবং ইন্টারনেট প্রোটোকল (TCP/IP) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই প্রোটোকলের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলোতে তথ্য স্থানান্তর এবং যোগাযোগ আরও সহজ ও দ্রুত হয়ে ওঠে।

TCP/IP প্রোটোকলটি ইন্টারনেটের জন্য একটি মানসম্পন্ন পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি ARPANET-এ প্রয়োগ করা হয়। TCP/IP প্রোটোকল দ্বারা, ইন্টারনেট শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এই প্রোটোকলের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়, এবং এভাবেই ইন্টারনেট বৈশ্বিক এক সংযোগব্যবস্থায় পরিণত হয়।

ইন্টারনেটের জনক হিসেবে ভিন্টন সার্ফ ও বব কান

ভিন্টন সার্ফ এবং বব কানকে অনেকেই ইন্টারনেটের জনক হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁরা TCP/IP প্রোটোকল আবিষ্কার করে ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করেন। TCP/IP প্রোটোকল ছাড়া ইন্টারনেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব হতো না।

ইন্টারনেটের উন্নয়ন এবং গ্লোবালাইজেশন

১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯১ সালে টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরও সহজ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। WWW-এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স, ভিডিও এবং অডিওসহ বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট অনলাইনে অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে ওঠে। এই প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেটের দ্রুত বিকাশ ঘটে, এবং সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটকে ব্যবহার শুরু করে।

ইন্টারনেটের প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ

ইন্টারনেটের প্রভাব বিশ্বজুড়ে এতটাই ব্যাপক যে এটি আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা, এবং বিনোদন সকল কিছুই আজ হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। ইন্টারনেটের বিকাশ কেবল কম্পিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমেও ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।

সর্বপ্রথম ইন্টারনেট কোন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে

ইন্টারনেট প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি বা ডারপা (DARPA) দ্বারা। ১৯৬৯ সালে DARPA প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের আদিরূপ ARPANET তৈরি করে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেমন স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (UCLA), ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা (UCSB), এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ-এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়।

DARPA-এর এই ARPANET প্রকল্পই ছিল প্রথম ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, যা মূলত সামরিক এবং গবেষণা কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ইন্টারনেটের বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। ARPANET-এর সাফল্যের পর ধীরে ধীরে অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে শুরু করে, এবং এভাবেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বিস্তৃত হতে থাকে।

ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কোন দেশে

ইন্টারনেটের আবিষ্কার এবং উন্নয়ন মূলত যুক্তরাষ্ট্রে হয়। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (DARPA) প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করে। মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করা, যা জরুরি পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করতে সক্ষম হবে।

১৯৬৯ সালে DARPA-এর উদ্যোগে ARPANET তৈরি করা হয়, যা প্রথম কার্যকর ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। এই প্রকল্পে প্রথমবারের মতো চারটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেমন স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (UCLA), ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা (UCSB), এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ-কে সংযুক্ত করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৭০-এর দশকে ভিন্টন সার্ফ এবং বব কান TCP/IP প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেটের বিকাশ ঘটে এবং পরবর্তীতে তা সারা বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় কত সালে ?

বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্রথম চালু হয় ১৯৯৬ সালের ৪ জুন। এই দিনে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। প্রথম দিকে ইন্টারনেট সেবা খুবই সীমিত ছিল এবং মূলত ডায়াল-আপ কানেকশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো, যার গতি ছিল অত্যন্ত কম। তবে ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়তে থাকে এবং ২০০০ সালের পর থেকে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টায় ও প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার আরও ব্যাপক ও সহজলভ্য হয়ে ওঠে।

২০০৬ সালে মোবাইল অপারেটররা জিপিআরএস (GPRS) এবং ইজিই (EDGE) প্রযুক্তি চালু করে, যা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট সহজলভ্য করে তোলে। এরপরে ২০১৩ সালে ৩জি এবং ২০১৮ সালে ৪জি সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।

শেষ কথা

ইন্টারনেটের জনক হিসেবে ভিন্টন সার্ফ এবং বব কানের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরা TCP/IP প্রোটোকল তৈরি করে ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এটি আজকের প্রযুক্তি-বিশ্বের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।


আরও পড়ুনঃ কম্পিউটারের জনক কে | জানুন কম্পিউটারের বিস্তারিত ইতিহাস

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url